Birthday Of Mayanayak Uttam Kumar: ফ্লপ হিরো থেকে বাংলার মহানায়ক হওয়ার যাত্রা! স্মৃতির ভেলায় ভেসে দেখা উত্তমের জীবনী
আজ মহানায়কের ৯৭তম জন্মদিবস।

Birthday Of The Legendary Actor Uttam Kumar: ‘কাহারবা নয় দাদরা বাজাও উল্টো পাল্টা মারছ চাঁটি, শশীকান্ত তুমি দেখছি আসরটাকে করবে মাটি!’ ‘সন্ন্যাসী রাজা’ সিনেমায় গানের আসরের সেই দৃশ্যে শশীকান্ত আসর মাটি করলেও আজ বাঙালির রবিবারের আসর কিন্তু মাটি হবে না। বরং জমে যাবে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) সিনেমা ও গানে গানে। কারণ আজ বাঙালির প্রিয় অভিনেতার জন্মদিন। যাঁর হাসি, অভিনয়, ব্যক্তিত্ব সবই ভুবনভোলা। তাই আজকে রবিবারের আসরে উঠে আসবে উত্তর কুমারের করা নানা চরিত্র যা আজও বাঙালির হৃদয়ে গাঁথা রয়েছে। আজও বাঙালি তরুণীদের পাগল করে উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) সেই চাহনি, সেই হাসি। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে শত শত অভিনেতা আসবেন যাবেন মহানায়ক একজনই ছিলেন, একজনই থাকবেন। বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোনো প্রজন্মই ভুলতে পারেনা তাদের প্রিয় নায়ককে।
Untold story of Uttam Kumar
Early Life
আজ মহানায়কের ৯৭তম জন্মদিবস। ১৯২৬ সালে আহিরিটোলায় মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহানায়ক। যদিও তার পিতৃনিবাস কলকাতার ভবানীপুরে। মহানায়কের আসল নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জী। পিতা সাতকড়ি চ্যাটার্জী এবং মা চপলা দেবী। তার দুই ভাই হলেন বরুণ এবং তরুণ। শুরুতে সাউথ সাবার্বান স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে গোয়েঙ্কা কলেজে উচ্চ শিক্ষার জন্যে ভর্তী হয়েছিলেন তিনি। সেখানে বিজনেস এবং কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করলেও কিছু কারণে অসম্পূর্ণ থেকে যায় পড়াশোনা এবং তিনি কলকাতা পোস্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের চাকরি গ্রহণ করেন।
Film Career
চাকরির পাশাপশি সুহৃদ সমাজ নাট্যগোষ্ঠীতে অভিনয় করতেন তিনি। যা তাদের পারিবারিক নাট্যগ্রুপ হিসেবেই বিশেষ পরিচিত ছিল। নিতীন বোস পরিচালিত মায়াডোর নাটকে অভিনয় করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন বহুবার। ১৯৪৮ সালে নীতিন বোসের পরিচালনায় ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন তিনি। তবে প্রথম দিকের বেশ কিছু ছবি তার ফ্লপ হয়। একের পর এক ছবি বিফলে যাওয়ায় অভিনয় জগৎ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
তবে ভাগ্যের চাকা ঘোরে পাহাড়ি সান্যালের হাত ধরে। ১৯৫২ তে মুক্তি পায় ‘বসু পরিবার’। এরপর ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। যদিও এই ছবির মূল আকর্ষণ ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়। তবে এই ছবির মাধ্যমেই দর্শক উত্তম কুমারকে পছন্দ করা শুরু করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ছবির মধ্য দিয়েই বাঙালির অমর জুটি উত্তম-সুচিত্রার জন্ম। এরপর থেকে একের পর এক বক্সঅফিস হিট করা ছবি তিনি উপহার দিয়ে গেছেন তাঁর দর্শককের। সন্ন্যাসী রাজা, বন পলাশির পদাবলি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, মৌচাক, সপ্তপদী, ছদ্মবেশী, ওগো বধূ সুন্দরী…. এই সিনেমার তালিকায় আছে আরও অনেক ছবি। নিজের কর্মজীবনে সুচিত্রা ছাড়াও তিনি জুটি বেঁধেছিলেন মাধবী, সুপ্রিয়া দেবীর মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গেও। শেষ জীবনে তাঁর অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, তনুজা, সুমিত্রা।
চিরকালীন ঋতু! কিংবদন্তি পরিচালকের জন্মদিনে রইল তাঁর জীবনের কিছু অজানা গল্প
পজেটিভ চরিত্রের পাশাপাশি করেছেন একাধিক নেগেটিভ চরিত্র। সেই নেগেটিভ চরিত্রও দাগ কেটে গেছে মানুষের মনে। নায়ক সিনেমায় তার উচ্চভিলাষী চরিত্র আজও দর্শকের মনের মণিকোঠায় রয়ে গিয়েছে। বাগ বন্দি খেলায় একজন নিষ্ঠুর ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কমেডি , ভিলেন বা রোমান্টিক সব চরিত্রেই তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। সব চরিত্রেই পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ দীর্ঘ ৩২ বছর বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছিলেন তিনি। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ছিল ২০২, যার মধ্যে ১৫টি হিন্দি ছবিও অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় নায়কদের মধ্যে উত্তম কুমার (Uttam Kumar) প্রথম চিড়িয়াখানা’ (১৯৬৭) ও ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ (১৯৬৭)-র জন্য ১৯৬৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওগো বন্ধু সুন্দরী করার সময়ই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন মহানায়ক। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেই শিল্পীকে স্মৃতির পাতায় ঠাঁই দিয়েছে বাঙালি। শিল্পীর মৃত্যু হয় শিল্পের মৃত্যু হয় না শিল্পী অমরত্ব লাভ করে তার কাজের মধ্যে দিয়ে। এই কথা যেন বারবার সত্য হয়ে ওঠে মহানায়কের জন্মদিবসে।
এরকম আরও প্রতিবেদন পড়তে ফলো করতে পারেন আমাদের Google News পেজটি