Brihadeeswarar The Mysterious Temple: ভিত ছাড়াই বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শিব মন্দির, জানুন আসল রহস্য
বৃহদেশ্বর মন্দির 'রাজারাজেশ্বরর মন্দির' এবং 'রাজারাজেশ্বরম' নামেও পরিচিত।

Brihadeeswarar Temple: ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বরাবরই আকর্ষণ করেছে পর্যটকদের। ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বরাবরই ছুটে যায় ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে। ভারতবর্ষ নানা ভাষা-ভাষীর দেশ। বিভিন্ন জাতির মানুষের বসবাস ভারতের মাটিতে। প্রতিটি মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা স্থান পেয়েছে ভারতের এই মাটিতে। ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থাকলেও তার মধ্যে অধিকাংশ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান।দেশ বিদেশের বহু মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সমস্ত ধর্মীয় স্থান তথা মন্দিরগুলি দর্শনের জন্য উপস্থিত হন। ভারতের প্রায় প্রতিটি মন্দিরের পিছনেই কিছু রহস্য বা পৌরাণিক কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে। যার টানে মানুষ ছুটে যায় বারবার। এমনই একটি মন্দির হল তামিলনাড়ুর বৃহদেশ্বরের মন্দির।
Brihadeeswarar Temple
এটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মন্দির হিসাবে সুপরিচিত। বৃহদেশ্বর মন্দির ‘রাজারাজেশ্বরর মন্দির’ এবং ‘রাজারাজেশ্বরম’ নামেও পরিচিত। বৃহৎ অর্থে বড় এবং ঈশ্বর অর্থে এখানে দেবাদিদেব মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে। ভারতে অগণিত শিব মন্দিরের মধ্যে এটি অন্যতম। এটিকে হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র মন্দির বলে মনে করা হয়ে থাকে।তবে এই মন্দিরের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক রহস্য। আশ্চর্যের বিষয় হলো বছরের পর বছর এই মন্দির দাঁড়িয়ে রয়েছে কোনো রকম ভিত ছাড়াই। যে কোনো নির্মাণই ভিত ছাড়া গড়ে উঠতে পারেনা। কিন্তু ভারতের এই বৃহদেশ্বর মন্দির তৈরি হয়েছে কোনো রকম ভিত ছাড়াই এবং বছরের পর বছর সেটি দাঁড়িয়ে রয়েছে একইভাবে।
বৃহদীশ্বর মন্দিরটি স্থানীয় ভাষায় পেরুভুতাইয়ার কোভিল নামেও পরিচিত। এটি ভারতের তামিলনাড়ুর তাঞ্জোর শহরে অবস্থিত। এই পবিত্র ইমারতটি মহাদেবের প্রতি ভক্তির প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসে এই রহস্যময় মন্দিরে।
History of Brihadeeswarar Temple
পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই শৈব মন্দিরটি তামিল মহারাজা রাজারাজা চোলা স্থাপন করেন ১০১০ সালে। প্রথম দিকে এই মন্দিরটির নাম ছিল পেরুভুদাইয়ার মন্দির। ২০১০ সালে এই মন্দিরটি হাজার বছর অতিক্রম করে। পুঁথিতে এই মন্দিরের যাবতীয় নিয়ম আচার লিপিবদ্ধ করা আছে। যা আজও নিয়মানুসারে পালন করা হয়ে থাকে। জানা যায়, রাজার স্বপ্নাদেশেই তৈরি হয়েছে মন্দির। এই মন্দিরের ভিতরে থাকা বিভিন্ন রাজা ও দেব-দেবীদের তৈলচিত্র, ব্রোঞ্জের তৈরি বিভিন্ন দেবতার মূর্তি, স্থাপত্য ও শৈল্পিক নির্দশন শ্রীলঙ্কার রাজাদের তৈরি মন্দিরগুলির মতো। মনে করা হয় রাজারাজা চোলা শ্রীলঙ্কার কোনও রাজার অনুকরণেই তৈরি করেন এই বিশালাকার মন্দিরটি। এই মন্দিরের স্থপতি ছিলেন কুনজারা মাল্লান রাজা রাজা পেরুনথাচান। বাস্তুশাস্ত্র ও আগমের মতো প্রাচীন গ্রন্থের উপর নির্ভর করেই গোটা মন্দিরটি গড়ে তুলেছিলেন পেরুনথাচান। বিশাল এই মন্দিরটি দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশৈলীকে প্রদর্শন করে।
The Architectural Marvel of Brihadeeswarar Temple
কারুকার্য
বিশাল গ্রানাইট পাথরে তৈরি মন্দিরটি দক্ষিণী স্থাপত্যকেই মনে করায় বারেবারে। মূল মন্দিরের চূড়াটি ২১৬ ফুট উঁচু। মন্দিরের চূড়ায় থাকা একটি বৃহৎ পাথরের ওজন প্রায় ৮০ টন। মন্দিরের মূল দরজায় বিশাল পাথরের তৈরি ১৬ ফুট লম্বা ও ১৩ ফুট উচ্চতার তিনটি নন্দী অর্থাত্ ষাঁড়ের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের অন্দরে পাঁচ মিটার লম্বা নৃত্যরত একটি শিবের মূর্তি রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের ভাস্কর যে তামিলনাড়ুর বিখ্যাত নৃত্যশৈলী ভারতনাট্যমের ছোঁয়াও লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরে প্রধান দেবতা মুলাভার অর্থাৎ শিব ছাড়াও চন্দ্র, সূর্য, দক্ষিণ মূর্তির বিশালাকার নানা চিত্র আঁকা রয়েছে। বৃহদেশ্বরর মন্দিরে আট মিটার লম্বা ‘অষ্ট-দিকপালক’-এর-( ইন্দ্র, অগ্নি, যম, বরুণ, নৈঋত, বায়ু, ঈশান, কুবের) মন্দির রয়েছে।
হাজার বছর ধরে ভিত ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরটি প্রতি পরতে পরতে ভারতীয় স্থাপত্য সংস্কৃতি ও ভাস্কর্যের ছোঁয়া রয়েছে। মন্দিরের ছাদের তৈল চিত্র নজর কাড়ে পর্যটনদের।
Rituals and Festivals at Brihadeeswarar Temple
বৃহদীশ্বর মন্দিরের আচার ও উৎসব
সারা বছরব্যাপী মন্দিরটি ভক্তি ও উদযাপনের ধ্বনিতে অনুরণিত হয়। মন্দিরে বিভিন্ন উৎসব মহান আড়ম্বর এবং জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। কিছু উল্লেখযোগ্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে মহাশিবরাত্রি। শিবের মন্দির হওয়ার কারণে শিবরাত্রির দেন মহা ধুমধাম করে পূজা করা হয়। যা কল্যাণ উৎসব নামে পরিচিত। মন্দিরের নির্মাতা রাজা রাজা চোলা প্রথমে মন্দিরের পূজায় যে রীতিনীতি চালু করেছিলেন সেই রীতিনীতি মেনেই আজও পুজো করা হয়ে থাকে এই মন্দিরে। শিবরাত্রির দিন ফুল, দুধ, তেল ও ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গটিকে পূজা করা হয়ে থাকে। এছাড়া ভারতনাট্যম নৃত্য পরিবেশন হয়। শিবরাত্রির দিন অত্যন্ত নিষ্ঠা ও জাঁকজমকের সঙ্গে পূজা করা হয় মহেশ্বরের।
ভারতের এই শিব মন্দিরে অলৌকিকভাবে প্রতিদিন বেড়েই চলছে নন্দী মূর্তি! জানুন আসল রহস্য
এক হাজার বছর ধরে ভিত ছাড়া দাড়িয়ে থাকা রহস্যময় এই শিব মন্দিরটি ভক্তি, আধ্যাত্মিকতা এবং স্থাপত্যের উজ্জ্বলতার আলোকবর্তিকা হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভারতের সকল শিবমন্দিরের থেকে এটি অনন্য হয়ে উঠেছে কারণ এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে প্রচলিত ভিত ছাড়াই এটি দাড়িয়ে রয়েছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং সময়ের নিয়মকে অমান্য করে এখনও পর্যন্ত দাড়িয়ে আছে এই মন্দির। পিরামিডের আকৃতির মতো, মন্দিরের স্থাপত্যের বিস্ময় পণ্ডিত, ইতিহাসবিদ এবং বিজ্ঞানীদের সমানভাবে আগ্রহী করেছে।
এরকম আরও প্রতিবেদন পড়তে ফলো করতে পারেন আমাদের Google News পেজটি