Raksha Bandhan: ভাইকে রাখি পরানোর আগে জেনে নিন এই উৎসবের মাহাত্ম্য ও রীতিনীতি
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

Raksha Bandhan 2023: হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে একটি পবিত্র উৎসব হলো রাখি। প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। এই দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বেধে দেয় এবং ভাইরা বোনদের আজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। রাখি বন্ধন উৎসব ভাই ও বোনের মধ্যে ভালোবাসা এবং প্রীতি বন্ধনের উৎসব রূপ গণ্য হয়। মূলত পুজোর মাধ্যমে শুরু হয় রাখি বন্ধন উৎসব এবং এরপরই বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বেধে দেয়। এই বছর রাখি পালিত হবে ৩০ এবং ৩১শে আগস্ট।
Raksha Bandhan History
রাখি বন্ধনের ইতিহাস
রাখি পূর্ণিমার দিন সুদূর বিদেশে ছড়িয়ে থাকা হিন্দুরাও রাখি বন্ধন উৎসবে অংশ নেয় এবং ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনা করে তার হাতে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয় যা রাখি বলে পরিগণিত হয়ে থাকে। কবে থেকে রাখি বন্ধন উৎসব শুরু হয়েছিল এর কোন সঠিক সন বা তারিখ সকলেরই অজানা। রাখি বন্ধন উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন অজানা পৌরাণিক কাহিনী। মূলত প্রাচীন ভারতে এই উৎসবের সূচনা হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর গ্রন্থে এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে।
- রাখি বন্ধনের একটি জনপ্রিয় কাহিনী হলো মৃত্যুর দেবতা যম ও যমুনার কাহিনী। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, যমুনা যমের হাতে একটি সুতো বেঁধেছিলেন এবং তিনি তাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মনে করা হয় তখন থেকেই ভাইয়ের হাতে পবিত্র সুতো বা রাখি বাঁধার উৎপত্তি।
- রাখি বন্ধন উৎসবের অপর একটি জনপ্রিয় কাহিনী হলো রাজা বালি এবং দেবী লক্ষ্মীর গল্প। রাজা বালি ছিলেন একজন শক্তিশালী রাক্ষস রাজা এবং তিনি তিন বিশ্ব জয় করেছিলেন। তবে তিনি ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত এবং তিনি বিষ্ণুকে প্রতিশ্রুতি দেন যে বিষ্ণু যা চাইবেন তাই তিনি দেবেন। বিষ্ণু বালির রাজ্য চাইলে, বালি তার রাজ্য দিয়ে রাজি হননি। অতঃপর বিষ্ণু ব্রাহ্মণ নারীর ছদ্মবেশে রাজা বালির প্রাসাদে পৌঁছান এবমজ রাজা বালির কাছে ভিক্ষা চাইলে রাজা বালি তাকে তার হাত দেন। ব্রাহ্মণ মহিলা তখন রাজা বালির হাতে একটি রাখি বেঁধেছিলেন এবং রাজা বালি তাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কথিত আছে তখন থেকেই রাখি বন্ধন উৎসবের উৎপত্তি।
- এছাড়াও ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রোধ করার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতার ঢাকা এবং সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই-বোনদের আহ্বান করছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করার জন্য। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে এবং বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেছিলেন।
Celebration of Raksha Bandhan
রাখিবন্ধন উৎসব উদযাপন
- রাখির এক সপ্তাহ আগে থেকেই গোটা বাজার ভরে ওঠে বিভিন্ন ধরনের রাখি। উৎসবের দিনে বোনেরা রাখি, সিঁদুর, চালের শীষ এবং মিষ্টি দিয়ে ভাইদের জন্য পূজার থালি প্রস্তুত করে।
- রাখি বন্ধনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো রাখি বাঁধার অনুষ্ঠান। বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধার পর কপালে তিলক পরিয়ে আরতি করে ভাইয়ের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করে। বিনিময়ে, ভাইরা বোনেদের উপহার দেয় এবং তাদের বোনদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ভাই ও বোনের মধ্যে এক প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে এই উৎসব।
Here some important things to include in the Rakhi thali:
রাখি বন্ধন উৎসবের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো রাখির থালা। বোনেদের পূজার সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে নিয়ম মেনে রাখির থালা সাজানো উচিত। রাখির থালা সাজাতে কিছু জিনিস গুরুত্বপূর্ণ।
রাখি
থালাতে যে রাখি রাখতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অনুষ্ঠানের আগে, একজনকে অবশ্যই পূজার স্থানে বা মন্দিরে রাখির থালা রেখে ইষ্ট দেবতাকে রাখি নিবেদন করতে হবে।
কুমকুমের তিলক
সিঁদুর বা কুমকুম যা দেবী লক্ষ্মীর প্রতিনিধিত্ব করে তাও রাখির থালায় রাখা আবশ্যক। রাখি বাঁধার পর ভাইয়ের কপালে সেই সিঁদুর লাগালে তা শুভ বলে বিবেচিত হয়। তিলক সম্পদ এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
অক্ষতা:
অক্ষতা মূলত পূজায় ব্যবহৃত অখণ্ড সাদা চাল। ছোট পাত্রে ভাত রেখে ভাইয়ের কপালে তিলক লাগালে তা শুভ হয়।
চন্দন:
বিশ্বাস করা হয়, চন্দন প্রশান্তি আনে। কপালে চন্দনের ফোঁটা দিলে ভাই ভগবান বিষ্ণু ও গণেশের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন এবং তার মনও শান্ত থাকে।
দিয়া বা বাতি:
দিয়া বা বাতি যে কোনো শুভ মুহূর্ত শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। তাই যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানেই দিয়া বা বাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়ে থাকে। রাখির থালায় দিয়া বা বাতি রেখে ভাইকে আরতি করলে তা শুভ রূপে বিবেচিত হয়।
মিষ্টি:
শুভ উপলক্ষে, রাখির থালায় অবশ্যই মিষ্টি রাখতে হবে। তিলক ও রাখি বন্ধনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ভাইদের মিষ্টি দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে ভাইকে মিষ্টি খাওয়ালে সম্পর্কের মাধুর্যতা চিরকাল বজায় থাকে।
প্রতি বছর ধুমধাম করে পালিত হয় ঝুলন যাত্রা, এই উৎসবের পেছনে রয়েছে এক বিরাট কাহিনী
Good time to tie Rakhi
রাখি বন্ধনের শুভ সময়
শাস্ত্র মতে ভদ্র কালে রাখি পরানো কখনোই উচিত নয়। রাখি উৎসবের ওপর ভদ্রের ছায়া থাকবে ৩০শে অগাস্ট রাত ৯টা বেজে ২ মিনিট পর্যন্ত। ৩০ আগস্ট রাত ৯টা বেজে ৩ মিনিট থেকে ৩১ আগস্ট ৭টা বেজে ৫ মিনিটের আগে পর্যন্ত রাখি পড়ানোর জন্য সময় অত্যন্ত শুভ।
এরকম আরও প্রতিবেদন পড়তে ফলো করতে পারেন আমাদের Google News পেজটি